বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা পূর্বঘোষিত বিক্ষোভ কর্মসূচি পালনে রাস্তায় নেমেছিলেন সোমবার। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর অবস্থানের মধ্যেও ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, সিলেট, ঠাকুরগাঁও, নোয়াখালীসহ কয়েক জেলার কিছু স্থানে বিক্ষোভ করেছেন তারা। কোথাও তারা বেশিক্ষণ দাঁড়াতে পারেননি। পুলিশের তাড়া খেয়ে স্থান ত্যাগ করেন তারা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা এদিনও কর্মসূচিস্থল থেকে শিক্ষার্থীদের আটক করেন।
প্রসঙ্গত, কোটা সংস্কারের প্রজ্ঞাপন জারির পরও নয় দফা দাবিতে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানান শিক্ষার্থীরা। রোববার রাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একাংশ সোমবার কর্মসূচি পালনের ডাক দেয়।
সোমাবার রাজধানীর পল্টন, সেগুনবাগিচা, সায়েন্সল্যাব, ইসিবি চত্বর, মিরপুর-১০ নম্বর গোলচত্বরসহ কয়েকটি এলাকায় জড়ো হন শিক্ষার্থীরা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ধাওয়া ও লাঠিচার্জে ছত্রভঙ্গ হয়ে যান। শুধু ঢাকায়ই জমায়েত হওয়ার স্থান থেকে অন্তত অর্ধশত শিক্ষার্থীকে আটক করার খবর পাওয়া গেছে। রোববার রাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একাংশের আহ্বানে এ বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা। এ কর্মসূচি ঘিরে সাধারণ নাগরিকদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়। তবে কোথাও এর তেমন প্রভাব পড়েনি। অফিস-আদালতে স্বাভাবিক কাজকর্ম হয়েছে। রাজধানীর অধিকাংশ এলাকার পরিবেশ প্রায় স্বাভাবিক ছিল। অধিকাংশ সড়কে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক ছিল। কিছু এলাকায় তীব্র যানজট দেখা গেছে।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) হেফাজতে থাকা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছয়জন সমন্বয়ক রোববার রাতে এক ভিডিও বার্তায় শিক্ষার্থীদের চলমান কর্মসূচি প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন। পরে অন্য সমন্বয়কদের মধ্যে কয়েকজন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সোমবার বিক্ষোভ কর্মসূচির ঘোষণা দিয়ে এ আন্দোলন চলমান থাকবে বলে জানান। সেখানে ঢাকার আটটি স্থানে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালনের কথা বলা হয়। স্থানগুলো হচ্ছে সায়েন্সল্যাব, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮ নম্বর গেট, প্রেস ক্লাব, উত্তরার বিএনএস সেন্টার, মিরপুর-১০, মিরপুরের ইসিবি চত্বর, রামপুরা ও মহাখালী।
সরেজমিন রাজধানীতে দেখা যায়, এসব এলাকায় সোমবার সকাল থেকেই বিপুলসংখ্যক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়। পাশাপাশি র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) হেলিকপ্টারের টহলও ছিল। সেনাবাহিনীর সদস্যদেরও রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে টহল দিতে দেখা যায়। বিভিন্ন স্থানে বসানো হয় চেকপোস্ট। পুলিশ মাইকিং করে কাউকে এক জায়গায় জড়ো না হতে হুঁশিয়ারিও দেয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মাঠে অবস্থান করেন। বিক্ষোভ সমাবেশ করার স্থানগুলোয় কাউকে আন্দোলনকারী সন্দেহ হলেই আটক করে পুলিশ। অভিযোগ রয়েছে, কোচিং করে আসা শিক্ষার্থী ও পথচারীদেরও গ্রেফতার করা হয়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীদের বিক্ষোভ কর্মসূচি ও গ্রেফতার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) যুগ্ম পুলিশ কমিশনার (অপারেশন্স) বিপ্লব কুমার সরকার যুগান্তরকে বলেন, মধ্যরাতে কর্মসূচি দেয় অন্ধকারের শক্তি জামায়াত-শিবির। সাধারণ মানুষকে আতঙ্কগ্রস্ত করার জন্য তারা বিভিন্ন কর্মসূচি দিচ্ছে। স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াত-শিবির ও তাদের আশ্রয়-প্রশ্রয়দাতা বিএনপির ধ্বংসাÍক কর্মসূচি আমরা বিন্দুমাত্র বাস্তবায়ন করতে দেব না। তিনি বলেন, আমরা কোনো সাধারণ শিক্ষার্থীর বিপক্ষে নই। বরং সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চাই। নাশকতাকারী জামায়াত, শিবির এবং বিএনপির সন্ত্রাসীদের আমরা বাংলার মাটিতে দাঁড়াতে দেব না।
সোমবার বিকাল ৩টার দিকে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সামনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন শিক্ষার্থীরা। ১০ মিনিট স্থায়ী ওই সমাবেশে বক্তব্য চলাবস্থায় পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে আন্দোলনকারীরা সটকে পড়েন। এ সময় তারা নিরাপত্তার স্বার্থে নিজেদের নাম প্রকাশ করেননি। বিক্ষোভকারীরা জানান, জাতীয় প্রেস ক্লাবে তাদের কর্মসূচি ঘিরে ধরপাকড় চালানো এবং পুলিশ, বিজিবিসহ বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যরা পুরো এলাকটি ঘিরে রাখায় তারা স্থান পরিবর্তন করে বিক্ষোভ করেছেন।
বক্তব্যে বিক্ষোভকারীরা বলেন, আমাদের সহপাঠীদের রাতের আঁধারে মেস থেকে তুলে নিয়ে নির্যাতন করা হচ্ছে। যৌক্তিক আন্দোলনে গুলি চালিয়ে হতাহত করা হয়েছে। অনেককে পঙ্গু করা হয়েছে। আমাদের পাঁচ সমন্বয়ককে তুলে নিয়ে নির্যাতন করা হয়েছে। জোর করে বিবৃতি দিতে বাধ্য করেছে। আমরা আমাদের সহকর্মীদের হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার চাই। তারা আরও বলেন, রাতের আঁধারে মেসে মেসে তল্লাশি করে শিক্ষার্থীদের আটক করা হচ্ছে। সড়কে বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে ছাত্রদের হেনস্তা ও মোবাইল ফোন চেক করা হচ্ছে। এই ক্ষমতা তাদের কে দিয়েছে? অনতিবিলম্বে কারফিউ প্রত্যাহারসহ বিজিবি-সেনাবাহিনীকে সরিয়ে নেওয়ার দাবি জানান তারা।
প্রেস ক্লাবের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করার কথা থাকলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের তৎপরতায় সেখানে দাঁড়াতেই পারেননি আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। দুপুর ১২টা থেকে পল্টন মোড় থেকে জাতীয় ঈদগাহ (কদম ফোয়ারা) মোড় পর্যন্ত তোপখানা রোডের উভয় পাশে কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে কয়েক ঘণ্টা বন্ধ করে রাখা হয়। পুলিশ, বিজিবি ও সেনাসদস্য প্রেস ক্লাবের সামনের সড়কে অবস্থান নেন। ওই সময় রায়ড কারসহ তাদের সতর্ক অবস্থানে দেখা গেছে। এ সময় তিনজন পথচারীকে আটকের তথ্য পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশের কোনো কর্মকর্তা সাংবাদিকদের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো বক্তব্য দিতে রাজি হননি।
রাজধানীর সায়েন্সল্যাব এলাকায় বেলা ১টার দিকে জড়ো হন শিক্ষার্থীরা। ‘শিক্ষার্থীদের অ্যাকশন, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’, ‘আমার ভাই মরল কেন, প্রশাসন জবাব চাই’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন। কিছুক্ষণ পরই পুলিশের বাধার মুখে পড়েন তারা। বাধা উপেক্ষা করে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে ধাওয়া ও লাঠিচার্জ করে পুলিশ। এতে ছত্রভঙ্গ হয়ে যান শিক্ষার্থীরা। সেখান থেকে অন্তত ১০ জনকে আটক করে পুলিশ।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, দুপুর ১টার পর থেকেই ধানমন্ডি দুই নম্বর সড়কে জড়ো হন বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী। পরে ১টা ২০ মিনিটের দিকে নিউমার্কেট ও ধানমন্ডি থানা পুলিশ শিক্ষার্থীদের দিকে এগোলো তারা দৌড়ে ধানমন্ডি স্টার কাবাবের সামনে গিয়ে জড়ো হন। সেখান থেকে মিছিল নিয়ে সামনে আসতে চাইলে ফের ধাওয়া দিয়ে পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ সময় বেশ কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে বলেও জানান প্রত্যক্ষদর্শীরা। শিক্ষার্থী আটকের বিষয়টি নিশ্চিত হতে ডিএমপির ধানমন্ডি জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) এবং ধানমন্ডি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাদের পাওয়া যায়নি।
এদিকে বেলা ১টার দিকে ইসিবি চত্বর এলাকায় বেশকিছু শিক্ষার্থী বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করতে গেলে পুলিশ তাদের লাঠিচার্জ করে সরিয়ে দেয়। সেখান থেকে কয়েকজনকে আটক করা হয়। ক্যান্টনমেন্ট থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. খলিলুর রহমান বলেন, দুপুর ১২টায় কিছু দুষ্কৃতকারী ইসিবি চত্বরে রাস্তা আটকানোর চেষ্টা করলে লোকজন তাদের ধাওয়া দেয়। এ সময় পুলিশ ৭-৮ জনকে আটক করে। একই অবস্থা ছিল মিরপুর-১০ নম্বর গোলচত্বরে। সেখান ১৮ জনকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মিরপুর থানার ইনস্পেকটর (তদন্ত) শেখ মোহাম্মদ কামরুজ্জামান।
নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে সকাল থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্য মোতায়েন করা হয়। আশপাশের সড়কে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গাড়ি টহল দিতে দেখা যায়। ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে দিয়ে তরুণ বয়সের কেউ গেলেই তাকেই চেক করা হয়। এমন অবস্থার মধ্যে বেলা ২টার কিছু আগে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে বেশকিছু শিক্ষার্থী জড়ো হওয়ার চেষ্টা করেন। সেখান থেকে শিক্ষার্থী ও শিক্ষার্থী সন্দেহে কয়েকজনকে আটক করে পুলিশ। নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, পুলিশ কাউকে দেখলেই গত কয়েকদিন যে সংঘাত হয়েছে, তখন আমরা কোথায় ছিলাম, কী করেছি ইত্যাদি প্রশ্ন করেছে। তারা বাজার করতে যাওয়া যুবককেও গ্রেফতার করেছে। আমরা এ ঘটনাকে ধিক্কার জানাই। প্রায় একই সময়ে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনেও বিপুলসংখ্যক পুলিশের কঠোর অবস্থান ছিল। সেখানেও কয়েকজন সন্দেহভাজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
ব্যুরো ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
চট্টগ্রামে ধাওয়া-পালটাধাওয়া, আহত ১০ : বিকাল সাড়ে ৩টায় চেরাগী পাহাড় মোড়ে বেশকিছু নারী শিক্ষার্থীসহ কয়েকশ শিক্ষার্থী জড়ো হয়। তারা সড়কে বসে বিক্ষোভ করতে থাকে। সেখানে স্থানীয় কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমন, শ্রমিক লীগ নেতা জিকুসহ সরকারদলীয় নেতাকর্মীরা তাদের বাধা দেয়। ব্যানার টেনেহিঁচড়ে ছিঁড়ে ফেলে। এ সময় পুলিশ গিয়ে শিক্ষার্থীদের কয়েকজনকে আটক করে গাড়িতে তুলে নিলে শিক্ষার্থীরা গাড়ি ঘেরাও করে বিক্ষোভ করতে থাকে। বিক্ষোভ দমাতে গেলে পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া-পালটাধাওয়া শুরু হয়। শিক্ষার্থীরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। সহপাঠীদের ছাড়িয়ে নিতে কেউ কেউ পুলিশের প্রিজন ভ্যানের সামনে শুয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করলে শিক্ষার্থীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ে। সংঘর্ষে এক পুলিশ, সাংবাদিক ও শিক্ষার্থীসহ অন্তত ১০ জন আহত হয়। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ১৬ জনকে আটক করেছে। তবে আহত শিক্ষার্থীদের তাৎক্ষণিকভাবে পরিচয় পাওয়া যায়নি।
ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ, বিক্ষোভ: মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থীরা। বেলা সাড়ে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকের সামনে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ ও সমাবেশ করেন তারা। এ সময় উপাচার্যের পদত্যাগের দাবি জানান আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। বিক্ষোভ সমাবেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. সালেহ হাসান নকীব, আরবি বিভাগের অধ্যাপক ইফতেখারুল আলম মাসউদ, সমাজকর্ম বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. জামিরুল ইসলাম ও ড. মো. সাইফুল ইসলাম শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করে আন্দোলনে অংশ নেন। এ সময় ‘বুকের ভেতর অনেক ঝড়, বুক পেতেছি গুলি কর’, ‘আমার ভাই মরল কেন, প্রশাসন জবাব চাই’, ‘জেগেছেরে জেগেছে, ছাত্র সমাজ জেগেছে’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে দেখা যায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের।
কুমিল্লায় দেশীয় অস্ত্র হাতে ছাত্রলীগের মহড়া, শিক্ষার্থীদের মারধর: বেলা ২টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়সংলগ্ন বিভিন্ন মোড়ে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা দেশীয় অস্ত্র হাতে মহড়া দিয়েছে। তাদের অনেকের হাতে ছিল রড, লাঠি, স্টিলের বেস বল ব্যাট, রামদা। এমনকি কারও হাতে প্রকাশ্যে পিস্তলও দেখা গেছে। এ সময় কুমিল্লা শহর থেকে আসা শিক্ষার্থীদের ছাত্র আন্দোলন চত্বর, কোটবাড়ী মোড়, কোটবাড়ী বিশ্বরোডসহ বিভিন্ন স্থানে মোবাইল ফোন চেক করার পাশাপাশি চড়-থাপ্পড় দিতে দেখা যায়। এদিকে মোড়ে মোড়ে মারধরের পরও কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ও আশপাশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রায় শতাধিক শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করে। এ সময় তাদের হাতেও লাঠি ও বাঁশের খণ্ড দেখা যায়।
জাবির সমন্বয়ক আরিফের মুক্তি দাবিতে সমাবেশ: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) অন্যতম সমন্বয়ক আরিফ সোহেলের নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে সমাবেশ করেছে আন্দোলনরত শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদ মিনারের সামনে এ সমাবেশ করেন তারা। এর আগে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন।
শাবিতে গুম ও ছাত্র হত্যার বিচার দাবি: শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবি) শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন। এ সময় জেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরাও কর্মসূচিতে অংশ নেন। বিকাল সাড়ে ৩টায় শাবির প্রধান ফটকের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়। মিছিলটি আখালিয়া গ্যাস স্টেশন পর্যন্ত গিয়ে ঘুরে এসে পুনরায় প্রধান ফটকে এসে শেষ হয়। সেখানে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন তারা। এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘লাশের হিসাব কে দিবে? কোন কোটায় দাফন হবে?’; ‘তোর কোটা তুই নে, আমার ভাই ফেরত দে’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।
বরিশালে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ: আন্দোলনে নিহতদের বিচার ও মিথ্যা মামলায় হয়রানি বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভ করেছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। নগরীর নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনালের ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের পাশে সোমবার ১২টা থেকে ঘণ্টাব্যাপী এ বিক্ষোভ করে তারা। এ সময় বিপুলসংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অবস্থান নেন।
যশোরে আন্দোলনকারীদের বিক্ষোভ: বিকালে শহরতলির ধর্মতলা থেকে শিক্ষার্থীদের মিছিল শুরু হয়। কিছুদূর যাওয়ার পর পুলিশ তাদের বাধা দেয়। এরপর শিক্ষার্থীরা তাদের কর্মসূচি শেষ করতে বাধ্য হয়। দুপুর ১টায় যশোর জেলা বিএনপির উদ্যোগে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলটি শহরের ভোলা ট্যাংক রোড থেকে চারখাম্বা মোড়, চিরুনি কল মোড় হয়ে বেজপাড়া তালতলা মোড়ে গিয়ে শেষ হয়। এদিকে বেলা ২টায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত দাবিদার চার শিক্ষার্থী সংবাদ সম্মেলন করে কর্মসূচি প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছে। তবে চার শিক্ষার্থীর কোটা আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ততা নেই দাবি করেছেন যশোর সমন্বয়ক ছাত্রনেতা রাশেদ খান।
ঠাকুরগাঁওয়ে শোক র্যালি: ৯ দফা দাবিতে ঠাকুরগাঁও সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে দুপুর পৌনে ১২টায় মহাসড়কে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। এর আগে নিহতদের স্মরণে শোক র্যালি এবং ছাত্র-জনতা হত্যার বিচারের দাবিতে সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের ব্যানারে শহরের চৌরাস্তা মোড়ে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সভা হয়েছে। এতে বক্তব্য দেন উদীচীর জেলা সংসদের সাধারণ সম্পাদক রেজওয়ানুল হক রিজু, জাতীয় তেল-গ্যাস-খনিজসম্পদ রক্ষা কমিটি জেলা শাখার সদস্য সচিব মাহবুব আলম রুবেল প্রমুখ।
নোয়াখালীতে সড়ক অবরোধ: নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, নোয়াখালী সরকারি কলেজ, মহিলা কলেজ, জেলা স্কুল, পাবলিক কলেজের শিক্ষার্থীরা দুপুর ৩টা থেকে সাড়ে ৩টা পর্যন্ত জেলা স্কুলের সামনে চৌমুহনী-মাইজদী সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে।
ফরিদপুরে কর্মসূচি প্রত্যাহার ঘোষণা: দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ফরিদপুর প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন প্রত্যাহারের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ফরিদপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ষষ্ঠ সেমিস্টারের শিক্ষার্থী আরমান শিকদার। এ সময় ফরিদপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র রিয়াদ মোল্লা ও রবিউল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
রংপুরে কঠোর অবস্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী: দুপুর থেকে রংপুর মহানগরীতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। বাড়ানো হয়েছে সেনাবাহিনী, বিজিবি, আনসার বাহিনী ও পুলিশের টহল। বসানো হয়েছে তল্লাশি চৌকি। পুলিশ জানিয়েছে, জীবন ও সম্পদ রক্ষায় এই বাড়তি সতর্কতার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ফলে বিকাল ৫টায় এ রিপোর্ট লেখার সময় পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের কোথাও জড়ো হতে দেখা যায়নি।
ইবি শিক্ষার্থীসহ আটক ৩০: সকাল থেকে শহর নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। দুপুরের পর শহরের গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের তৎপরতা আরও বেড়ে যায়। বিকালে মোড়ে মোড়ে চলে তল্লাশি। কাউকে সন্দেহ হলেই আটক করে নেওয়া হয় থানায়। এভাবে ৬টা পর্যন্ত ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) শিক্ষার্থীসহ অন্তত ৩০ জনকে আটক করেছে পুলিশ। তাদের অধিকাংশই ছাত্র।
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.