পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের মেঝেতে শুয়ে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে ১২ বছর বয়সী মেয়েশিশুটি। চোখেমুখে তার আতঙ্কের ছাপ। নিজের কষ্টের কথা বলতে গেলেই ছলছল করছে চোখে পানি। পাশে বসে আছেন মা–বাবা দুজনই। মেয়েটি ধর্ষণের শিকার হয়েছে জানিয়ে থানায় মামলা করেছেন তার বাবা। তবে ঘটনার সাত দিনেও অভিযুক্ত যুবককে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।
মেয়েটির মা বলেন, তাঁর মেয়ে একটি এনজিও পরিচালিত বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী। পড়াশোনার পাশাপাশি বাড়ির অদূরের মসজিদ–সংলগ্ন মক্তবে পড়াশোনা করত সে। প্রতিদিন সকাল ছয়টার দিকে মেয়ে মক্তবে পড়তে যেত। গত মঙ্গলবার (৯ জুলাই) সকালেও একই সময়ে বাড়ি থেকে বের হলে স্থানীয় একটি মোড়ে ওত পেতে থাকা মো. বিটুল (২৮) নামের এক যুবক শিশুটিকে পার্শ্ববর্তী একটি দোকানে তুলে নিয়ে যায়। ওই সময় সেখানে কোনো লোকজন ছিল না। শিশুটিকে মুখ চেপে ধরে বিটুল ধর্ষণ করে পালিয়ে যান। পরে কাঁদতে কাঁদতে শিশুটি বাড়িতে গিয়ে মাকে ঘটনা খুলে বলে। পরে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
আজ সোমবার দুপুর আড়াইটার দিকে পঞ্চগড় সদর হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, নারী সার্জারি ওয়ার্ডে শয্যা খালি না থাকায় মেঝেতে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে ধর্ষিত শিশুটিকে। সকালে কিছু পরীক্ষা–নিরীক্ষা করা হয়েছে তার। সেসব পরীক্ষার প্রতিবেদন হাতে নিয়ে পাশে বসে আছেন মেয়েটির বাবা।
মেয়েটি বাবা জানান, জেলার বোদা উপজেলার একটি গ্রামে বাড়ি তাঁদের। মানুষের বাড়িতে দিনমজুরের কাজ করে সংসার চালান তিনি। গত মঙ্গলবার সকালে ঘটনার পর মেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে প্রথমে বোদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে স্থানান্তর করেন চিকিৎসকেরা। চিকিৎসা নিয়ে তিন দিন পর বাড়িতে নিয়ে গেলেও গত শনিবার আবারও অসুস্থ হয়ে পড়ে মেয়ে। পরে তাকে আবারও পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
মেয়েটির বাবা আরও বলেন, ‘মেয়ের এত কষ্ট দেখে আর ভালো লাগে না। শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ব্যথায় থাকতে পারছে না। ডাক্তার কয়েকটা পরীক্ষা করাতে দিয়েছেন। আমরা গরিব মানুষ, একদিন কাজ না করলে খাবার জোটে না। এখন চিকিৎসায় খরচ করারও টাকা নেই। আমি গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বোদা থানায় বিটুলের নামে একটা মামলা করেছি। এক সপ্তাহ হয়ে গেল, কিন্তু বিটুলকে ধরতে পারছে না পুলিশ। আমি তার ফাঁসি চাই।’
পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) আবুল কাশেম বলেন, ‘মেয়েটি সেক্সুয়াল অ্যাসল্ট নিয়ে এর আগে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল। পরে আইনি প্রক্রিয়ায় তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। এখন আবার সে পেটব্যথা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। তার পরীক্ষা–নিরীক্ষা করা হচ্ছে।’
বোদা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনার পর থেকেই অভিযুক্ত যুবক পলাতক। তাঁকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। এর আগে বুধবার পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে মেয়েটির স্বাস্থ্য পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। সেই সঙ্গে মেয়েটি আদালতে জবানবন্দিও দিয়েছে। আশা করছি, খুব দ্রুত আসামিকে গ্রেপ্তার করতে পারব।’
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.