০৩ আগস্ট, ২০২৪ ০০:০০
কোটা সংস্কার আন্দোলনে সবচেয়ে বেশি উত্তপ্ত ছিল রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকা। ১৯ থেকে ২১ জুলাই দফায় দফায় সংঘর্ষে এখানকার প্রধান সড়কসহ বিভিন্ন গলিতে দুই পুলিশ সদস্যসহ ৩৩ জন নিহত হয়। এদের মধ্যে দুই পুলিশ সদস্যসহ চারজনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। অন্য ২৯ জন আন্দোলনের আড়ালে সন্ত্রাসীদের গুলিবর্ষণে নিহত হয়েছে।
অন্যদিকে কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সারা দেশে সহিংসতার অভিযোগে গত ১৪ দিনে প্রায় সাড়ে ১০ হাজার সন্দেহভাজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সরকারি স্থাপনায় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ, পুলিশের ওপর হামলা, সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় করা পাঁচ শতাধিক মামলায় এদের গ্রেপ্তার করা হয়। পুলিশ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) প্রসিকিউশন বিভাগের তথ্য অনুসারে কোটা সংস্কার আন্দোলনের নামে রাজধানীতে ভাঙচুর, সরকারি কাজে বাধা, চুরি, অগ্নিসংযোগ, হত্যাসহ বিভিন্ন অপরাধে এ পর্যন্ত ২৭৪টি মামলা করা হয়েছে।
এসব মামলায় ১৫ দিনে (১৭ জুলাই থেকে ১ আগস্ট) তিন হাজার ১১ জনকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে গত ২৩ জুলাই এক দিনে সর্বোচ্চ ৫১৬ জনকে কারাগারে পাঠানো হয়।
এ সংঘর্ষের ঘটনায় করা ১৬টি মামলার এজাহার বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য পাওয়া যায়। এসব মামলার এজাহারের তথ্য অনুযায়ী, সংঘর্ষের ঘটনায় যাত্রাবাড়ী থানা পুলিশ মামলা করেছে ১৪টি।
এর বেশির ভাগ আসামি অজ্ঞাতপরিচয়। এর বাইরে দুই পুলিশ সদস্য নিহত হওয়ার ঘটনায় তাঁদের পরিবার বাদী হয়ে আলাদা দুটি মামলা করেছে। এই দুই মামলার একটিতে ১৭ জন অন্যটিতে ১৬ জনকে এজাহারনামীয় আসামি করা হয়। এজাহারনামীয় আসামিদের বেশির ভাগ বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মী।
এর বাইরে পুলিশের মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সহিংসতার সময় দুষ্কৃতকারী/সন্ত্রাসীদের এলোপাতাড়ি গুলিতে নিহতের ঘটনা ঘটেছে।
পুলিশ ও আদালত সূত্রে জানা যায়, এসব হত্যার ঘটনায় করা ১৬ মামলার এজাহার গ্রহণ করেছেন ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএ) আদালত। এই ১৬ মামলার মধ্যে পুলিশ সদস্য গিয়াস উদ্দিন হত্যা মামলায় ডেমরা থানা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মাসুদ রানা, দনিয়া ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. এরফান ওরফে রোকন, ছাত্রদলের সক্রিয় সদস্য মো. আবু বক্কর, রবিউল ইসলাম, মো. সৌরভ মিয়া, মো. তারেক হোসেন এবং ঢাকা কলেজের এইচএসসির (বিজ্ঞান বিভাগ) একজন ছাত্রকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নেওয়া হয়। এ ছাড়া বাকি ১৫ মামলায় এখনো কোনো আসামি গ্রেপ্তার হয়নি বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
যাত্রাবাড়ীতে পুলিশ হত্যাকাণ্ডে এবার যুবদল নেতার দায় স্বীকার
কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সহিংসতায় রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে নিহত হন পুলিশ সদস্য গিয়াস উদ্দিন। এ ঘটনায় করা মামলায় যুবদল নেতা ইরফান ওরফে রোমান এই হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন। গতকাল শুক্রবার তাঁকে আদালতে হাজির করে পুলিশ। এ মামলায় তিনি ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে রাজি হন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক মুরাদুল ইসলাম এ তথ্য দেন।
সহিংসতায় ৫৩ হত্যা মামলা
ডিএমপির প্রসিকিউশন বিভাগ থেকে জানা যায়, সহিংসতার ঘটনায় ডিএমপির বিভিন্ন থানায় এ পর্যন্ত মামলার সংখ্যা ২৭৪। এর মধ্যে অন্তত ৫৩টি হত্যা মামলা।
আদালতের সাধারণ নিবন্ধন শাখা থেকে জানা যায়, আন্দোলনের নামে সহিংসতায় যাত্রাবাড়ীতে সর্বাধিক ১৬টি হত্যা মামলা করা হয়েছে। এ ছাড়া কদমতলীতে চারটি, বাড্ডায় পাঁচটি, ভাটারায় তিনটি, পল্টন ও নিউ মার্কেটে ছয়টি, রামপুরা, মোহাম্মদপুর, মিরপুর ও কাফরুলে যথাক্রমে ২টি করে এবং খিলগাঁও, গুলশান, বনানী, ধানমণ্ডি, হাতিরঝিল, উত্তরা পশ্চিম ও পূর্ব থানায় একটি করে হত্যা মামলা করা হয়। এর মধ্যে পুলিশ হত্যা মামলার সংখ্যা তিন
নোয়াখালীতে বিএনপি-জামায়াতের ৪৯ নেতাকর্মী গ্রেপ্তার
কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে নোয়াখালীতে বিএনপি-জামায়াতের ৪৯ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল দুপুরে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন নোয়াখালীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) মোহাম্মদ ইব্রাহীম।
পুলিশ জানায়, সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে নাশকতার ঘটনায় গত ১৮ জুলাই থেকে ১ আগস্ট পর্যন্ত নোয়াখালীতে বিএনপি-জামায়াতের বিরুদ্ধে ছয়টি মামলা করা হয়। এর মধ্যে ৪৯ আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে বিএনপির নেতাকর্মী ৩২ জন, জামায়াতের ১১ জন এবং শিবিরের ছয়জন নেতাকর্মী রয়েছেন।
সিলেটে আরো ৮ জন গ্রেপ্তার
কোটা সংস্কার আন্দোলনে পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষে সিলেটে আটজনকে গ্রেপ্তার করেছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী।
বাঘায় বিএনপি নেতা পলাশ গ্রেপ্তার
রাজশাহীর বাঘায় বিএনপি নেতা আনোয়ার হোসেন পলাশকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গতকাল বাউসা ইউনিয়নের নিজ গ্রাম আড়পাড়া জামে মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করতে যাওয়ার সময় তাঁকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
দোহারে জামায়াতের ছয় নেতাকর্মী গ্রেপ্তার
নাশকতার পরিকল্পনার অভিযোগে ঢাকার দোহারে জামায়াতে ইসলামীর ছয় নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। গতকাল উপজেলার লটাখোলা তালীমুল কোরআন মডেল মাদরাসার সভাকক্ষ থেকে তাঁদের আটক করা হয়।
আটক নেতাকর্মীরা হলেন দোহার থানা জামায়াতের জেনারেল সেক্রেটারি ও শুরা সদস্য এ কে এম নুরুল আলম, সদস্য মো. সাইফুল ইসলাম, রুকন মো. আশরাফ হোসেন, মো. মাহমুদুল হাসান আলমগীর, মো. সালমান হোসাইন ও মো. ওয়াসিম।
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.