কোটা সংস্কার আন্দোলন কেন্দ্র করে আবারও রক্তাক্ত হলো রাজপথ। আবারও মানুষের মৃত্যু হলো। ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি পালনকালে বৃহস্পতিবার সারা দেশে অন্তত ৩০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে একজন সাংবাদিক ও চিকিৎসকসহ শিক্ষার্থী, পথচারী এবং গাড়িচালক রয়েছেন। এদিন দিনভর পথে পথে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশ ও ছাত্রলীগ–যুবলীগ নেতাকর্মীদের দফায় দফায় ভয়াবহ সংঘর্ষ হয়েছে। রাজধানীর উত্তরা, ধানমন্ডি–২৭, নীলক্ষেত, রামপুরা–মেরুল বাড্ডা, মিরপুর–১০, যাত্রাবাড়ী–শনির আখড়া, মতিঝিলসহ আরও কয়েকটি পয়েন্ট রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। রাতে এক্সপ্রেসওয়েও বন্ধ করে দেওয়া হয়। ঢাকার বাইরে চট্টগ্রাম, নরসিংদী, মাদারীপুর, সিলেট, নাটোর, নেত্রকোনা, কক্সবাজার, জয়পুরহাটসহ জেলায় জেলায় প্রায় একই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করতে মুহুর্মুহু টিয়ার শেল, সাউন্ড গ্রেনেড, রাবার বুলেট ছোড়ে পুলিশ। অপরদিকে পুলিশের ওপর বৃষ্টির মতো ইটপাটকেল মারেন আন্দোলনকারীরা। এ সময় পুলিশের পাশাপাশি দেশীয় অস্ত্র ও আগ্নেয়াস্ত্র হাতে ছিলেন ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরাও। দিনভর সংঘর্ষে শুধু রাজধানীতেই মারা গেছেন ২৩ জন। এছাড়া চট্টগ্রামে ২ ও নরসিংদীতে ২ এবং ঢাকার সাভার, সিলেট ও মাদারীপুরে একজন করে মারা গেছেন। এদিন আহত হয়েছেন আরও সহস্রাধিক। তাদের মধ্যে কয়েক শ গুলিবিদ্ধ। এদিকে রাত দুটায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত রাজধানীর মিরপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় সংঘর্ষ চলছিল বলে খবর পাওয়া গেছে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজসহ কয়েকটি হাসপাতালে শত শত আহত ব্যক্তি চিকিৎসাধীন রয়েছেন। আহত ও তাদের স্বজনদের আর্তচিৎকারে হাসপাতালগুলোর পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে। আহতদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও রয়েছেন। পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে অন্তত ২২ সাংবাদিকও আহত হয়েছেন।
কোটা সংস্কার আন্দোলন কেন্দ্র করে মঙ্গলবার সারা দেশে সহিংসতায় ছয়জনের মৃত্যু হয়। এর একদিন পর বৃহস্পতিবার আবারও সহিংসতায় হতাহতের এ ঘটনা ঘটল। যদিও সহিংসতা এড়াতে আগেই সারা দেশের সব স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করে হল ফাঁকা করা হয়। জোরদার করা হয় নিরাপত্তাব্যবস্থা।
ঢাকা : বৃহস্পতিবার সংঘর্ষের জেরে রাজধানীর উত্তরা, মিরপুরসহ কয়েক স্থানে পুলিশ ফাঁড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশন–বিটিভি ভবনে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করেছেন বিক্ষুব্ধরা। অগ্নিসংযোগ করা হয় মহাখালীতে অবস্থিত সরকারি স্থাপনা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ভবন ও বনানীর সেতু ভবনেও। উত্তরায় র্যাবের গাড়ি ও যাত্রীবাহী বাস ভাঙচুর করা হয়েছে। মিরপুর–১০ গোলচত্বরে ফুটওভার ব্রিজে আগুন দেওয়ায় বিকাল সাড়ে ৫টার পর মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। ওই ফুটওভার ব্রিজের ওপর দিয়েই মেট্রোরেল চলাচল করে। রাজধানীতে এমন পরিস্থিতিতে গণপরিবহণ চলাচল করেনি বললেই চলে। অন্যান্য যানবাহনও কম ছিল। ঢাকা থেকে দূরপাল্লার বাস চলাচল করেনি। রেলপথ অবরোধ করায় বৃহস্পতিবার দুপুর ২টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত ঢাকার সঙ্গে সারা দেশের রেল চলাচল বন্ধ ছিল। যান চলাচল না করায় চরম দুর্ভোগে পড়েন যাত্রীরা। অনেকেই হেঁটে গন্তব্যে যেতে বাধ্য হয়েছেন। তবে লঞ্চ চলাচল স্বাভাবিক ছিল। রাত ৮টা পর্যন্ত ঢাকা নদীবন্দর (সদরঘাট) ৪৪টি লঞ্চ বিভিন্ন গন্তব্যে ছেড়ে গেছে।
এদিন উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে জরুরি বৈঠক করেন কয়েকজন মন্ত্রী। পরে জাতীয় সংসদ ভবন এলাকায় এক প্রেস ব্রিফিংয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘আমরা অবশ্যই (কোটা) সংস্কারের ব্যাপারে নীতিগতভাবে ঐকমত্য পোষণ করেছি। আমরা কোটা সংস্কারের পক্ষে।’ একই সঙ্গে পিতৃতুল্য নাগরিক হিসাবে সহিংসতা বন্ধ করা, আন্দোলন প্রত্যাহার বা স্থগিত করার জন্য আন্দোলনকারী কোমলমতি শিক্ষার্থীদের প্রতি অনুরোধ জানান আইনমন্ত্রী। তিনি জানান, সরকার শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে রাজি রয়েছে। তবে আলোচনায় বসতে প্রস্তাব নাকচ করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক মো. নাহিদ ইসলাম। এক ফেসবুক স্ট্যাটাস দিয়ে তিনি জানান, শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে সহিংসতা চালিয়ে সরকার উদ্ভূত পরিস্থিতি তৈরি করেছে। এর দায় সরকারেরই। সরকার আলোচনার কোনো পরিস্থিতি রাখেনি। তিনি লেখেন, শহিদের রক্তের ওপর কোনো সংলাপ হবে না। সরকারকেই সমাধানের পথ বের করতে হবে। এর আগে বুধবার রাত থেকে মোবাইল ইন্টারনেটের গতি ফোর–জি থেকে নামিয়ে টু–জিতে নামিয়ে আনে বিটিআরসি। এ কারণে ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঢুকতে পারেননি ব্যবহারকারীরা। মোবাইল ইন্টারনেট সেবা বিঘ্নের কথা বুধবার এক অনুষ্ঠানে স্বীকার করেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।
জানা যায়, সংঘর্ষে রাজধানীর উত্তরায় ১২ জন, ধানমন্ডিতে একজন, যাত্রাবাড়ী–শনির আখড়ার তিনজন এবং আজিমপুরের দুজন মারা গেছেন। এর মধ্যে অনলাইন নিউজপোর্টাল ঢাকা টাইমসের সি?নিয়র রি?পোর্টোর মেহেদী হাসানও (৩৮) রয়েছেন। শনির আখড়ায় আহত হলে তাকে সন্ধ্যায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তার লাশ দেখে স্ত্রী মিজা পপী বারবার মূর্ছা যান। ঢাকা মেডিকেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, রাত ১২টা ৪০ মিনিট পর্যন্ত হাসপাতালে ৭৭ জনকে ভর্তি করা হয়েছে, তাদের অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক। আহতদের অধিকাংশেরই শরীরে বিভিন্ন স্থানে গুলির চিহ্ন রয়েছে। ২৭৫ জনকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে, যাদের ১৮৫ জনই গুলিবিদ্ধ।
এদিন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে ৮ জনকেই যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে আহত অবস্থায় আনা হয়েছিল। তারা হলেন মাদ্রাসা শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ (২৫), ওয়াসিম (৪০), সাংবাদিক মেহেদি হাসান (৩২), ব্যবসায়ী নাজমুল (২৮), ব্যবসায়ী ইসমাইল (৩৬) এবং আনুমানিক ৩০ বছর বয়সি অজ্ঞাত ৩ জন। এছাড়া আজিমপুরের মোহাম্মদ (২২), রামপুরার অজ্ঞাত ১৮ বছরের যুবক মেডিকেলে মারা যান। এর বাইরে ইমরান হাসান (২২) নামে একজন বুধবার আহত হয়ে ভর্তি হয়েছিলেন। বৃহস্পতিবার বিকাল ৪টায় আইসিইউতে তার মৃত্যু হয়েছে।
উত্তরায় দফায় দফায় সংঘর্ষে নিহত ১৩: সারাদিন পুলিশ–আন্দোলনকারী মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষে বিমানবন্দর থেকে উত্তরা পর্যন্ত পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। সংঘর্ষে ১৩ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। দুই শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে একজন চিকিৎসক (ডা. সজীব সরকার), তিনজন শিক্ষার্থী, একজন গাড়িচালক, আরেকজন মো. শাকিল হোসেন, তিনি একটি সংবাদমাধ্যমের স্থানীয় প্রতিনিধি ছিলেন বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। তবে তার বিস্তারিত পরিচয় পাওয়া যায়নি। অন্য ছয়জনের পরিচয়ও এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত জানা যায়নি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হাউজবিল্ডিং থেকে রাজলক্ষ্মী মোড় পর্যন্ত সড়কে হাজারো আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী মাঠে নামেন। বেলা ১১টার দিকে স্থানীয় বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ ও স্কুলের শিক্ষার্থীরা উত্তরার জমজম টাওয়ারের সামনে জড়ো হন। পরে তারা মিছিল নিয়ে মূল সড়কে উঠতে চাইলে পুলিশ ও র্যাব তাদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে। পরে সংঘর্ষ শুরু হয়। তাদের ওপর সাউন্ড গ্রেনেড, কাঁদানে গ্যাস ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে করে পুলিশ ও র্যাব। জবাবে শিক্ষার্থীরা ইটের টুকরো ছুড়ে মারে। এ ঘটনায় উত্তরায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। গতকাল সন্ধ্যায় উত্তরা পূর্ব থানা ঘেরাও করে রাখেন আন্দোলনকারীরা। কয়েক হাজার আন্দোলনকারী সেখানে অবস্থান নেন। তখন পুলিশ থানার ভেতরে ছিল। সন্ধ্যা ৬টা থেকে সাড়ে ৬টার মধ্যে ৭ জন আন্দোলনকারীকে আহত হতে দেখা গেছে। আন্দোলনকারীদের দাবি, থানার ভেতর থেকে ছররা গুলি করা হচ্ছে। এতেই আহতের ঘটনা ঘটছে।
সরেজমিন উত্তর কুয়েত মৈত্রী, বাংলাদেশ মেডিকেল, উত্তরা ক্রিসেন্ট ও শিনশিন জাপানসহ একাধিক হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের ইমারজেন্সি বিভাগের সামনে আহত কিছু শিক্ষার্থীকে চিকিৎসা দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক সাব্বির আহমেদ জানান, রাজধানীর উত্তরায় পুলিশ ও র্যাবের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষে নিহত একজনকে হাসপাতালে আনা হয়। তাকে মৃত অবস্থায় আনা হয়েছিল। এরপরও তার সঙ্গে থাকা শিক্ষার্থীরা তাকে ঢামেকে নিয়ে গেছেন। এছাড়া শতাধিক ছাত্র আহত অবস্থায় হাসপাতালে আসেন। তাদের অনেককেই চিকিৎসার পর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তবে হাসপাতালটির উপপরিচালক মেজর (অব.) হাফিজুল ইসলাম যুগান্তরকে ছয়জনের মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তাদের মধ্যে একজন চিকিৎসক, অন্যজন একটি গণমাধ্যমের স্থানীয় সাংবাদিক। বাকি চারজনের পরিচয় তাৎক্ষাণিকভাবে তিনি জানাতে পারেননি। উত্তরা ক্রিসেন্ট হাসপাতালের অর্থোপেডিক বিশেষজ্ঞ মাহমুদুল হাসান জানান, ওই হাসপাতালে একজন মারা গেছেন। তার পরিচয় জানা যায়নি। রাতে হাসপাতালের সহকারী ব্যবস্থাপক মাহাবুবুর রহমান চারজনের মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেন।
কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. মাহফুজা আরা বেগম জানান, ওই হাসপাতালে মৃত অবস্থায় চারজনকে আনা হয়। তাদের মধ্যে তিনজন শিক্ষার্থী ও একজন অজ্ঞাত গাড়িচালক। গুরুতর অবস্থায় কয়েকজন চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
ধানমন্ডিতে ফেসবুকে মায়ের পোস্টে ছেলের মৃত্যুর খবর : কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সরকার সমর্থক নেতাকর্মী ও পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষে যুদ্ধাবস্থার রূপ নেয় ধানমন্ডির পুরোনো ২৭ নম্বর সড়ক এলাকা। বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার পর থেকেই ধানমন্ডির রাপা প্লাজার পাশের মোড় থেকে শুরু হয় সংঘর্ষ। পড়ে তা আশপাশ এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। রাত ১২টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন এলাকায় আন্দোলনকারীরা অবস্থান করছেন বলে জানা গেছে। তাদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ চলছে। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে মোহাম্মদপুর থানা ঘিরে রেখেছে আন্দোলনরতদের একটি অংশ। মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড, তিন রাস্তার মোড়, লালমাটিয়া, ধানমন্ডি, ঢাকা উদ্যানে আন্দোলনকারীরা অবস্থান করছেন।
এদিন সংঘর্ষে ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজের এক শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। নিহত ওই শিক্ষার্থীর নাম মো. ফারহানুল ইসলাম ভূঁইয়া (ফারহান ফায়াজ)। তার বয়স ১৮ বছর। তিনি উচ্চ মাধ্যমিকের শিক্ষার্থী ছিলেন এবং ২০২৫ ব্যাচের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পরীক্ষায় অংশগ্রহণের কথা ছিল। কলেজের এক কর্মকর্তা বিষয়টি যুগান্তরকে নিশ্চিত করে বলেন, তার লাশ একটি বেসরকারি হাসপাতালে রয়েছে। ওই হাসপাতালে আহত আরও কয়েকজন আইসিইউতে রয়েছেন। সন্তানের মৃত্যুর খবর জানিয়ে ফেসবুকে এক পোস্টে ফায়াজের মা নাজিয়া খান জানিয়েছেন, ‘তারা আমার শিশুকে হত্যা করেছে। এমনকি তার বয়স ১৮ বছরও ছিল না। আমি ফারহান ফায়াজের হত্যার বিচার চাই।’
মিরপুরে আন্দোলনকারীদের ধাওয়ায় পিছু হটেন ক্ষমতাসীনরা : রাজধানীর মিরপুরে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে ধাওয়া–পালটাধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় পুলিশবক্সে আগুন, যানবাহন ভাঙচুর ও মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করা হয়।
বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা মিরপুর–১৩ নম্বর বিআরটিএ’র সামনে ও মিরপুর–১০ নম্বর গোলচত্বরে অবস্থান নেন। এ সময় স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে তাদের ধাওয়া–পালটাধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়। বেলা সাড়ে এগারোটার দিকে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের হটিয়ে মিরপুর–১০ নম্বর দখলে নেন আন্দোলনকারীরা। ছাত্রদের তাড়া খেয়ে স্থানীয় এক সংসদ সদস্য তার অনুসারীদের নিয়ে সেখান থেকে পালিয়ে যান। এক পর্যায়ে দুপুর পৌনে একটার দিকে পুলিশ এসে ছাত্রদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। তাদেরকে ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ কয়েক রাউন্ড টিয়ারশেল, সাউন্ড গ্রেনেড ও রাবার বুলেট ছুড়ে। এতে পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। পুলিশের টিয়ারশেলের আঘাতে ৩০–৪০ জন শিক্ষার্থী আহত হন। এ সময় ওই সড়কে ৫টি মোটরসাইকেলে আগুন দেওয়া হয়। দুপুর পৌনে ২টার দিকে মিরপুর ১০ নম্বর গোল চত্বর পুলিশবক্সে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। পুলিশ বক্সের আগুন বৈদ্যুতিক তারে ছড়িয়ে পড়লে অনেকে ভেবেছিল মেট্রোরেল স্টেশনে আগুন লেগেছে। অবশ্য ফায়ার সার্ভিসের ২টি ইউনিট দুপুর ৩টার আগে আগুন নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে। ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তরের ডিউটি অফিসার খালেদা ইয়াসমিন বলেন মিরপুর ১০ নম্বর গোল চত্বর এলাকার পুলিশবক্সে আগুন লাগার খবর আসে দুপুর ২টায়। পরে ২টি ইউনিট ঘটনাস্থলে এসে ৩টার আগে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
যাত্রাবাড়ী রণক্ষেত্র : যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা ও ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় মুহুর্মুহু রাবার বুলেট, ছিটা গুলি, সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করেছে পুলিশ। আর ইট–পাটকেল ছুড়ছে আন্দোলনকারীরা। এতে চারজন পুলিশসহ ৪০ জন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী এবং পথচারী আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তাদেরকে স্থানীয় হাসপাতাল ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নেওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
বুধবার রাত থেকেই ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কের যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা থেকে মাতুয়াইল মা ও শিশু হাসপাতাল পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা সড়কে গাছের গুড়ি জ্বালিয়ে সড়ক অবরুদ্ধ করে রাখে। এতে শত শত মালবাহী গাড়িসহ বিভিন্ন যানবাহন সড়কে আটকা পড়ে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত পুলিশ সড়ক দখল নেওয়ার জন্য মুহুর্মুহু রাবার বুলেট, সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করেও ব্যর্থ হয়। এ সময় বিজিবি, র্যাব ও আনসার সদস্যরাও সঙ্গে ছিলেন। এ সময় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা হানিফ ফ্লাইওভারের কুতুবখালী টোলপ্লাজা জ্বালিয়ে দেয়। বৃহস্পতিবার ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কের যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা থেকে সাইনবোর্ড পর্যন্ত ৪ কিলোমিটার এলাকায় রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।
যাত্রাবাড়ীর কাজলার পার এলাকায় সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ একজন রিকশাচালক মারা গেছেন। নিহত রিকশাচালকের পরিচয় জানা যায়নি। গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ৪টায় কাজলার পারের বটতলা এলাকায় গুলিবিদ্ধ হন তিনি। পরে তাকে পথচারীরা আহত অবস্থায় ঢামেক হাসপাতালে নিয়ে আসে। পরে কর্তব্যরত চিকিৎসক বিকাল পৌনে ৬টায় পরীক্ষা–নীরিক্ষার পর মৃত ঘোষণা করেন। ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন ঢামেক হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক (ইনচার্জ) মো. বাচ্চু মিয়া। তিনি জানান, মৃতদেহ হাসপাতাল মর্গে রাখা হয়েছে। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট থানাকে অবগত করা হয়েছে।
সায়েন্স ল্যাব–নিউমার্কেট এলাকায় সংঘর্ষ : প্রত্যক্ষর্শীরা জানান, বিকাল ৫টার দিকে আন্দোলনকারীরা নীলক্ষেত মোড় অবরোধ করতে চেষ্টা করেন। এ সময় পুলিশ আন্দোলনকারীদের বাধা দেয়। এরপরই শুরু হয় সংঘর্ষ। পুলিশের ওপর ঢিল ছোড়ে আন্দোলনকারীরা। এ সময় পুলিশও রাবার বুলেট, টিয়ারশেল ছোড়ে। এ সময় পুলিশের সঙ্গে যোগ দেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারাও। টিয়ারশেলের ধুয়ায় পুরো এলাকা ছেয়ে যায়। এর আগে সকালে সড়কে বাস চলাচল ছিল খুবই কম। মাঝে মধ্যে দুই একটি বাস দেখা গেছে। সকাল থেকেই এ এলাকায় কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা ছড়িয়ে–ছিটিয়ে অবস্থান করছিলেন। পরে সায়েন্স ল্যাব মোড়ে ১০ থেকে ১২ জন একত্রিত হলে তাদেরকে ধাওয়া করে ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ। পরবর্তীতে তারা ফের সংগঠিত হয়ে এলে বিকালে সংঘর্ষ বাধে।
শাহবাগও ফাঁকা, ঢাবির প্রবেশমুখে নিরাপত্তা জোরদার : ঢাকার অন্যতম ব্যস্ত এলাকা রাজধানীর শাহবাগ। তবে বৃহস্পতিবার সেখানে ছিল ভিন্ন চিত্র। অনেকটা জনমানব শূন্য। গণপরিবহণ ছিল না বললেই চলে। মাঝে মধ্যে দুই একটি বাস দেখা গেলেও সেখানে যাত্রী ছিল কম। বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম প্রবেশদ্বার রাজধানীর শাহবাগে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার দিনভর শাহবাগ থানার সামনে পুলিশের শতাধিক সদস্য মোতায়েন ছিল। সকাল ১০টায় ওই এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, শাহবাগ থানার সামনে জলকামান ও সাঁজোয়া যান প্রস্তুত রাখা হয়েছে। কেউ ক্যাম্পাসের ভেতরে ঢুকতে গেলেই তাকে বাধা দেওয়া হচ্ছে। বিশেষ করে কোনো শিক্ষার্থীকেই ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। তবে যারা ঢাকা মেডিকেলসহ জরুরি প্রয়োজনে যেতে চাইছেন তাদের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে যেতে দেওয়া হচ্ছে।
রামপুরায় রাত সাড়ে ১১টা থেকে অভিযান শুরু করে বিজিবি। প্রায় আধা ঘণ্টা গুলি চালিয়ে তারা ওই এলাকায় নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেয়। ১২টার পরও সেখানে বাসিন্দারা গুলির শব্দ পেয়েছেন। এতে আশপাশের এলাকার বাসিন্দাদের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
মহাখালীর আমতলী, গুলশান ১ নম্বর এলাকাসহ অন্যান্য এলাকায় দেশীয় অস্ত্র নিয়ে বিভিন্ন ভবন ও এটিএম বুথে লুটপাট করা হয়েছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন। সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত তারা ওই এলাকায় অবস্থান করছিল।
এদিকে চলমান আন্দোলনে সংঘর্ষ ও নিহতের ঘটনায় রাজধানীর বিভিন্ন থানায় ২৮টি মামলা হয়েছে বলে জানিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগ জানিয়েছে, ১২ জুন থেকে বুধবার পর্যন্ত মামলা হয়েছে ৬টি, এর মধ্যে শাহবাগ থানায় ৪টি। বুধবার ও বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত মামলা হয়েছে ১৯টি, শাহবাগ থানায় ২টি। বুধবার নিউমার্কেট থানায় ৩টি মামলা হয়েছে। তবে এসব মামলায় অভিযুক্ত ও অভিযোগের কোনো তথ্য জানায়নি পুলিশ। এছাড়া বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ৪০ জনের বেশি পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে ডিএমপির গণমাধ্যম শাখা।
ব্যুরো ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খরব–
নরসিংদী : ঢাকা–সিলেট মহাসড়কের ভেলানগরে দুপুর সাড়ে ৩টার দিকে কোটা আন্দোলনকারীরা অবস্থান নেন। এ সময় পুলিশ আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে গেলে তাদের সঙ্গে ধাওয়া–পালটাধাওয়া শুরু হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ গুলিবর্ষণ করে। পুলিশের গুলিতে ২ জন নিহত ও অন্তত ১৫০ জন আহত হয়েছেন। নিহতরা হলেন–শিক্ষার্থী তাহমিদ তামিম ও ইমন মিয়া। তাহমিদ স্থানীয় এনকেএম স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্র। সে সদর উপজেলার চিনিশপুরে গ্রামের রফিক ইসলামের ছেলে। ইমন মিয়া পলাশ উপজেলার দড়িচর গ্রামের কাউয়ুম মিয়ার ছেলে। আহতদের জেলা হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আন্দোলনকারীরা ঢাকা–সিলেট মহাসড়কে উঠতে চাইলে পুলিশ বাধা দেয়। এতে উভয়পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। এসময় আন্দোলনকারীরা ইটপাটকেল ছুড়তে থাকলে পুলিশ গুলি ছোড়ে। এতে মুহূর্তের মধ্যে জেলখানার মোড় রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এসময় পুলিশের গুলিতে স্কুলছাত্র তাহমিদ তামিম ঘটনাস্থলেই মারা যায়। শহরের বাসাইল রেলগেট ভাঙচুর করা হয়েছে। এ সময় ঘণ্টিঘরেও আগুন দেওয়া হয়। এছাড়া জেলখানা এলাকায় ঢাক–সিলেট মহাসড়ক কেটে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে।
টেকেরহাট (মাদারীপুর) : সকাল ১০টার দিকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে মাদারীপুর শহরের ডিসিব্রিজ এলাকায় জড়ো হন আন্দোলনকারীরা। পরে পুলিশ সুপার ও জেলা প্রশাসকের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেন তারা। এ সময় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ বাধে। পুলিশও আন্দোলনকারীদের ওপর টিয়ারশেল নিক্ষেপ ও ফাঁকা গুলিবর্ষণ করে। সংঘর্ষে পুরো শহর রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। নতুন শহর, প্রধান সড়ক, সুমন হোটেল এলাকা, কলেজ রোড, পুরান বাজার, সিটি মার্কেট এলাকাসহ সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে আন্দোলন। পুরান বাজারে কয়েকটি দোকানে ইটপাটকেল নিক্ষেপ এবং ভাঙচুর করা হয় আওয়ামী লীগ অফিস।
সংঘর্ষ চলাকালে পুলিশের ধাওয়া খেয়ে ৪ শিক্ষার্থী শকুনী লেকে পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়ে। ৩ জন জীবিত উদ্ধার হলেও দীপ্ত দে (২২) নামে এক শিক্ষার্থী নিখোঁজ থাকে। পরে দুপুরে ফায়ার সার্ভিসের লোকজন শকুনী লেকের দক্ষিণ পাড় থেকে দীপ্ত দে’র লাশ উদ্ধার করে। নিহত দীপ্ত দে মাদারীপুর সরকারি কলেজের অনার্স (রসায়ন) দ্বিতীয়বর্ষের ছাত্র এবং শহরের আমিরাবাদ এলাকার স্বপন দে’র ছেলে। এছাড়াও গুলিবিদ্ধিসহ উভয়পক্ষের অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছেন। ঘটনাস্থল থেকে আটক করা হয়েছে ৮ জনকে।
শিক্ষার্থী নিহতের খবরে মাদারীপুর জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়, জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও পুলিশ সুপার (এসপি) কার্যালয়ে ব্যাপক ভাঙচুর চালানো হয়েছে। এ ছাড়া শহরের লঞ্চঘাটসংলগ্ন একটি পুলিশ ফাঁড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
এদিকে ঢাকা–বরিশাল মহাসড়কে মস্তফাপুর মোড়ে কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের সংঘর্ষে আহত হয়েছেন অন্তত ৪ জন।
সাভার : বেলা ১১টার দিকে পাকিজার মোড়ে ঢাকা–আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ও গুলি চালায়। পুলিশের সঙ্গে ছিল আ.লীগের নেতাকর্মীসহ অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। ইসরাফিল নামে এক শিক্ষর্থী বলেন, পুলিশের সঙ্গে সাভার উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আতিকুর রহমান আতিক তার দুই শতাধিক সঙ্গী নিয়ে শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। তাদের ছোড়া গুলিতে শিক্ষার্থী ইয়ামিনের মৃত্যু হয়। গুলি করার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ভিডিওতে দেখা যায়, আতিকের নেতৃত্বে অন্তত দুই শতাধিক যুবক ধারালো অস্ত্র নিয়ে ঢাকা–আরিচা মহাসড়কে টহল দিচ্ছে। এর কিছুক্ষণ পর ব্লু রঙের টিশার্ট পরিহিত এক যুবক ও আতিক শর্টগান উঁচু করে শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। শিক্ষার্থীরা গুলিবিদ্ধ ইয়ামিনকে উদ্ধার করে এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক ইয়ামিনকে মৃত ঘোষণা করেন। নিহত শিক্ষার্থী ইয়ামিন ঢাকার মিরপুরের মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির (এমআইএসটি) সিএসই বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি সাভারের বাসিন্দা।
সিলেট : শহরের সুরমা আবাসিক এলাকার বিভিন্ন মেসে রাত ৮টার দিকে তল্লাশি শুরু করে ছাত্রলীগ। এ সময় পালাতে গিয়ে খাল পার হওয়ার সময় পানিতে পড়ে রুদ্র সেন (২২) নামে এক শিক্ষার্থী মারা গেছেন। তিনি শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন।
হবিগঞ্জ : আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দুপুর ১২টা থেকে থেমে পুলিশের সংঘর্ষ শুরু হয়। বেলা ১টার দিকে শহরের বিভিন্ন স্থানে এ সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ কয়েকশ’ রাউন্ড রাবার বুলেট, কাঁদানে গ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। সংঘর্ষে পুলিশসহ শতাধিক আন্দোলনকারী আহত হয়েছেন। অবস্থা বেগতিক আকার ধারণ করলে শহরে পুলিশের পাশাপাশি ৩ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়। বিকাল পৌনে ৫টায় সাংবাদিকদের মধ্যস্থতায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
জামালপুর : দুপুরে শহরের গেটপাড় এলাকায় কোটা আন্দোলনকারী ও পুলিশের মাঝে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় পুলিশ সাংবাদিকসহ অন্তত ৩০ জন আন্দোলনকারী আহত হয়েছেন। আন্দোলনকারী ৪ জনকে আটক করেছে পুলিশ। শিক্ষার্থীরা ঢাকা থেকে দেওয়ানগঞ্জগামী আন্তঃনগর তিস্তা এক্সপ্রেস ট্রেন জামালপুর রেল জংশন স্টেশনে আটকে দেন। প্রায় ৪ ঘণ্টা পর ট্রেন ছেড়ে যায়।
সোনারগাঁ (নারায়ণগঞ্জ) : ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কের সোনারগাঁয়ে ছাত্রলীগের পিটুনিতে ১৫ জন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন।
মুন্সীগঞ্জ ও গজারিয়া : মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ার জামালদি বাসস্ট্যান্ড এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করেছেন হামদর্দ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র–ছাত্রীসহ কয়েক শতাধিক শিক্ষার্থী। শিক্ষার্থীরা প্রায় ৪০ মিনিট মহাসড়কে অবস্থান নেন। এ সময় ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
বন্দর (নারায়ণগঞ্জ) : বন্দরে পুলিশের পিকআপ ভ্যান ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছেন আন্দোলনকারীরা। এ সময় ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কের মদনপুর বাসস্ট্যান্ডে অর্ধশতাধিক যানবাহনেও ভাঙচুর চালান তারা।
সিদ্ধিরগঞ্জ দক্ষিণ (নারায়ণগঞ্জ) : ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কে শিমরাইল মোড় বৃহস্পতিবার অবরোধ করে শিক্ষার্থীরা। এ সময় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীরা ছাত্রলীগের দুই নেতাকে মারধর করে তাদের ব্যবহৃত মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয়।
নাটোর : দিনভর দফায় দফায় ছাত্রলীগ–যুবলীগ ও পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ হয়েছে। এতে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় পুরো শহর। এসময় পুলিশের ছোড়া রাবার বুলেটে রাহি, ফরহাদ, নক্ষত্র ও রাহুল নামে ৪ ছাত্র গুরুতর আহত হয়েছেন। এছাড়া দুপক্ষের সংঘর্ষ ও ইটপাটকেলে নাটোরের পুলিশ সুপারসহ সাত পুলিশ সদস্যসহ অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। তিন শিক্ষার্থীকে আটক করেছে পুলিশ।
দিনাজপুর : আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের ব্যাপক সংঘর্ষ, ধাওয়া–পালটাধাওয়া হয়েছে। এ সময় আন্দোলনকারীরা দিনাজপুর জেলা আওয়ামী লীগ, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের অফিস ভাঙচুর ও অন্তত ১৫টি মোটরসাইকেল ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে। সংঘর্ষে আহত হয়েছেন অন্তত ৫০ জন।
নওগাঁ : সকাল ১০টার দিকে শহরের হাট–নওগাঁ উচ্চবিদ্যালয় থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলটি শহরের গোস্তহাটির মোড় হয়ে পুরাতন বাসস্ট্যান্ড এলাকায় পৌঁছালে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সাব্বির রহমান ও সাধারণ সম্পাদক আমানুজ্জামান সিউলের নেতৃত্বে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এতে ১০ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন।
নেত্রকোনা : বেলা সাড়ে ১১টায় শহিদ আব্দুল কদ্দুছ মগড়া সেতুতে ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষ হয়েছে। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও পুলিশের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষে আহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক। এর মধ্যে গুলিবিদ্ধ ৭ শিক্ষার্থীর অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাদের উন্নত চিকিৎসার জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। পুলিশের দুটি গাড়ি ভাঙচুর করে মালপত্র নদীতে ভাসিয়ে দেন আন্দোলনকারীরা।
মানিকগঞ্জ : ঢাকা–আরিচা মহাসড়কের মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডের মানরা ও উঁচুটিয়া এলাকায় পুলিশ লাইন্সের সামনে ৪ ঘণ্টা অবরোধ করে রাখেন শিক্ষার্থীরা। সকাল ১০টা থেকে শুরু হওয়া অবরোধ চলে টানা বেলা ২টা পর্যন্ত। এসময় পুলিশ টিয়ারগ্যাস ও কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলিবর্ষণ করলে আন্দোলনকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। পরে মহাসড়কের তিনটি পৃথকস্থানে আন্দোলনকারীরা সড়ক অবরোধ করেন। সংঘর্ষে অর্ধশত আহত হয়েছেন।
কুমিল্লা ও কুবি : দুপুরে ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কের কোটবাড়ি এলাকায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সাথে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এসময় পুলিশ ও বিজিবির দুটি গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়। সংঘর্ষে বিজিবি সদস্য মোহাম্মদ শাহিন, নাহিদ হাসান আহত হয়েছেন। এছাড়া পুলিশের এসআই মনিরুল ইসলাম, এএসআই আফজাল হোসেন, কনস্টেবল সাইফুলসহ শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। এছাড়া ঢাকা–চট্টগ্রাম রেল সড়কের ব্রাহ্মণপাড়া এলাকায় তিনটি যাত্রীবাহী ট্রেন আটকা পড়ে।
কক্সবাজার : সন্ধ্যায় শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে শহরের লালদীঘি এলাকায় গেলে জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের কাছে পুলিশের সামনেই হামলা করে আওয়ামী লীগ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। তারা আগ্নেয়াস্ত্র হাতে শিক্ষার্থীদের এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়ে। এতে ২০ শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধসহ অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছেন।
টাঙ্গাইল : সকাল সাড়ে ১০টার দিকে টাঙ্গাইল প্রেস ক্লাবের সামনে আন্দোলনকারীরা জড়ো হন। প্রায় আধা ঘণ্টা অবস্থানের পর তারা ঢাকা–টাঙ্গাইল–বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কে যাওয়ার সময় শহরের পুরাতন বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছালে পুলিশি বাধার মুখে পড়ে। এসময় দফায় দফায় ধাওয়া–পালটাধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে পুলিশ–সাংবাদিকসহ অন্তত অর্ধশত জন আন্দোলনকারী আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে দুজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন বলে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা দাবি করেছেন। আন্দোলনকারীরা জেলা আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ কার্যালয় ভাঙচুর করে।
কিশোরগঞ্জ ও কটিয়াদী : বেলা ১১টা থেকে কয়েক হাজার শিক্ষার্থী কিশোরগঞ্জ শহরের পুরান থানার চার রাস্তার মোড়, একরামপুর রেললাইন মোড়, শোলাকিয়া রেললাইন মোড়, ঈশা খাঁ রোড ও রেলস্টেশন এলাকাসহ শহরের বিভিন্ন প্রধান প্রধান সড়ক অবরোধ করে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ–করেন। পরে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী–পুলিশ সংঘর্ষে শহর রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এ সময় শিক্ষার্থী, গণমাধ্যম কর্মী ও পুলিশসহ অন্তত শতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন। এছাড়া কটিয়াদীতে শিক্ষার্থীদের মিছিলে ছাত্রলীগ যুবলীগের হামলায় ২৫ জন আহত হয়েছেন।
বগুড়া : আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ ও ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে পুলিশসহ শতাধিক আহত হয়েছেন। বেলা সাড়ে ১০টার দিকে সরকারি আজিজুল হক কলেজে শুরু হওয়া সংঘর্ষ প্রথমে সাতমাথায় ছড়িয়ে পড়ে। সেখান থেকে ছড়িয়ে পড়লে পুরো শহর রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। থেমে থেমে এ সংঘর্ষ চলে দিনভর। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ও আর্মড পুলিশ শত শত রাউন্ড রাবার বুলেট এবং টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করেছে। শুধু দুটি সরকারি হাসপাতালে ৫৩ জনকে ভর্তি করা হয়েছে। আহতদের অধিকাংশই গুলিবিদ্ধ। বিভিন্ন স্থান থেকে অন্তত ২৫ জন আন্দোলনকারীকে আটক করা হয়েছে।
নোয়াখালী : বেগমগঞ্জে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের সংঘর্ষ, পালটাপালটি ধাওয়া হয়েছে। এতে আহত হয়েছেন অন্তত ১৫ জন। এ সময় উত্তেজিত লোকজন কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করে।
কুষ্টিয়া : আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের দিনভর দফায় দফায় সংঘর্ষে রণক্ষেত্র পরিণত হয়েছে কুষ্টিয়া। তিনশ রাউন্ড গুলি ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ করেও শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করতে পারেনি পুলিশ। সংঘর্ষে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পলাশসহ কমপক্ষে ২০ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ৯ জনকে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
ঝিনাইদহ : পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীর দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ছাত্রলীগের ছাউনি (ট্রেন্ড) ভাঙচুর করে গুঁড়িয়ে দিয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ শতাধিক রাউন্ড সাউন্ড গ্রেনেড, টিয়ার শেল, কাঁদানে গ্যাস ছুড়েছে। আহত হয়েছেন পুলিশ সদস্যসহ অন্তত ১৫ জন।
পাবনা : পাবনায় পুলিশ–ছাত্রলীগ ও আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ধাওয়া–পালটাধাওয়া এবং সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে পুলিশসহ কমপক্ষে ২০ জন আহত হয়েছেন। এছাড়া কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে।
রাবি : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে ঢাকা–রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা।
খুলনা : খুলনায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা একটি প্রাইভেটকার ভাঙচুর করেছে। এছাড়া পুলিশ সাঁজোয়া যান ও জলকামান নিয়ে সমাবেশস্থলে ঢুকতে চাইলে শিক্ষার্থীরা বাধা দেয়।
নারায়ণগঞ্জ : নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে আন্দোলনকারী, পুলিশ ও ছাত্রলীগের ধাওয়া–পালটাধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ সময় চারজনকে আটক করেছে পুলিশ। নারায়ণগঞ্জ শহরে পুলিশের সঙ্গে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ধাওয়া–পালটাধাওয়া ও সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন।
লালমনিরহাট : লালমনিরহাটের হাতীবান্ধায় আওয়ামী লীগের কার্যালয় ভাঙচুর করেছেন মিছিলকারী শিক্ষার্থীরা।
মাগুরা : মাগুরায় সড়ক অবরোধ করলে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া–পালটাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় বিক্ষুব্ধদের ছোড়া ইট পাথরের আঘাতে মাগুরার অতিরিক্ত পুলিশ সুপারসহ ১০ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। ঘটনাস্থল থেকে ৮ শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়েছে।
রাজশাহী : রাজশাহীতে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। ঘটেছে বেশ কয়েকটি হাতবোমার বিস্ফোরণ। পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর করেছে আন্দোলনকারীরা। আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ছাত্রলীগ ও যুবলীগ এবং পুলিশের সংঘর্ষে অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে দুজন পুলিশ সদস্য রয়েছেন।
চুয়াডাঙ্গা : চুয়াডাঙ্গা শহরের শহিদ আলাউল ইসলাম সড়কের কাঠপট্টি এলাকায় শিক্ষার্থীরা অবস্থান নেন। ছাত্রলীগের বেশ কিছু কর্মী লাঠিসোঁটা নিয়ে তাদের ওপর হামলা করেন। এ সময় কোটাবিরোধীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের লাঠির আঘাতে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।
মৌলভীবাজার : মৌলভীবাজারে সাধারণ শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল বের করলে পুলিশি বাধার মুখে পড়ে। এসময় পুলিশ লাঠি চার্জ করে শিক্ষার্থীদের চত্রভঙ্গ করে দেয়। এতে চার শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হয়েছেন।
রংপুর : রংপুর মেট্রোপলিটন তাজহাট থানায় ব্যাপক ভাঙচুর করা হয়েছে। দিনভর সংঘর্ষে সাংবাদিক, পুলিশ ও পথচারীসহ প্রায় শতাধিক আহত হয়েছেন। দিনভর সংঘর্ষ চলাকালে পুলিশ, বিজিবি ও র্যাব প্রায় সহস্রাধিক টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করেও আন্দোলকারীদের নিবৃত্ত করতে পারেনি। বৃহস্পতিবার রাতে উপ–পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) কার্যালয় ভাঙচুর করেন বিক্ষুব্ধরা।
সিরাজগঞ্জ : সিরাজগঞ্জে বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম মহাসড়ক বন্ধ করে দেন আন্দোলনকারীরা। এতে উত্তরাঞ্চলের সঙ্গে ঢাকার সড়ক যোগাযোগ সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। এসময় বিএনপি কার্যালয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে উভয়পক্ষের অর্ধশতাধিক আহত হয়েছেন।
গাইবান্ধা : গাইবান্ধায় পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় ১৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। হামলাকারীদের ইটপাটকেলের আঘাতে সহকারী পুলিশ সুপার আব্দুল্যাহ আল মামুন, সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাসুদ রানাসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।
মধুপুর (টাঙ্গাইল) : টাঙ্গাইলের মধুপুরে পুলিশ ও আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষে ওসিসহ ৮ জন আহত হয়েছেন।
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.